মোঃ আশেকুর রহমান
প্রধান শিক্ষক
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সু-শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি সাধন করতে পারে না তাই অর্থবহ ও কল্যাণমূখী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে দেশ প্রেমিক, চরিত্রবান ও আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার মহান উদ্দেশ্য নিয়েই টেংগনমারী বহু-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়, নীলফামারীর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষা ব্যক্তির সকল প্রকার সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করে। সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তিকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার মাধ্যমে সুকৌশলে শিক্ষার্থীর আবেগ, বুদ্ধিমত্তা ও নীতি-নৈতিকতার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। তাই ব্যক্তিকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হতে হয়। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন- খেলাধুলা, বিতর্ক, সঙ্গীত, সাহিত্যচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা ইত্যাদির পরিপূর্ণ কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেও হয়। সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের আনন্দ প্রদানের পাশাপাশি সুস্থ্য দেহ ও সুন্দর মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও যুগোপযোগী সময়ের চাহিদানুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখন-শেখানো অধিকতর ফলপ্রসূ করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গিকারাবদ্ধ। পরিচালনা পরিষদ, প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবিভাবক, ও সুধিমহল সকলকে ওয়েবসাইট থেকে সেবা গ্রহণে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। *ভূমিকা:- মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সর্ব প্রথম বাণী “পড়! তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম তা মহান আল্লাহ ঐশী গ্রন্থের মাধ্যমে মানব জাতিকে অবহিত করেছেন বহুকাল পূর্বে। আবার পথহারা জাতিকে আলোর সন্ধান দিতে যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। আমরা হাদীসে পাক অধ্যায়ন করলে দেখতে পাই আমাদের প্রিয়নবী (সঃ) বলেছেন- “আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে শিক্ষক হিসাবে”। এখানে শিক্ষা ও শিক্ষক শব্দদ্বয় একটি অপরটির সঙ্গে ওতপ্রত ভাবে জড়িত। শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে শিক্ষক বা ওস্তাদের প্রয়োজন। যেমনটি আমরা জানি গারে হেরা নামক বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছাত্র মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ), আর তাঁর শিক্ষক ছিলেন সৃষ্টি জগৎ সমূহের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তা’য়ালা। মোট কথা শিক্ষাই আলো, শিক্ষা ছাড়া সকল পথ বা মত অন্ধকার। একটি কথা প্রণিধানযোগ্য যে, প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে প্রকৃত খোদাভীরু শিক্ষক ছাড়া বিকল্প নাই। একজন আদশ শিক্ষকের প্রতি-প্রধান শিক্ষকের বানী-মোঃ আশেকুর রহমান শিক্ষা কি ও কেন?r শিক্ষায় বহুল প্রচারিত প্রবাদ বাক্য হলো-“শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” আবার কোন কোন বিখ্যাত গ্রন্থে দেখা যায়-“শিক্ষাই আলো” আবার কোন কোন মনীষী বলেন- “নৈতিক শিক্ষাই জাতির একমাত্র পাথেয়”। জ্ঞান তাপস ভাষা বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন-“যার মধ্যে ইসলামের জ্ঞান নাই সে যত বড় শিক্ষিতই হঊক না কেন; সেতো মূর্খ পন্ডিত” উপোরক্ত বাণী গুলো থেকে বুঝা যায় নৈতিক মূল্যেবোধ সম্পন্ন শিক্ষাই পারে একজন মানুষকে সঠিক ও সুন্দর পথ দেখাতে। শিক্ষা নিয়ে আলোকপাত করলে বুঝা যায়, যে বিদ্যা অর্জন করলে ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, আলো-অন্ধকার, শক্ত-নরম, ঠান্ডা-গরম, বৈধ-অবৈধ, পাপ-পূণ্য, জানা-অজানা, শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, ঘৃণা, নীতি-নৈতিকতা, দুনিয়া-আখিরাত, রাত-দিন, জ্বিন-ইনসান, বায়ু-পানি, ভূ-মন্ডল নভোমন্ডল, শান্তি-সুখ, পাওয়া-না পাওয়ার, দূঃখ-বেদনা’র গুণাবলী অর্জনই শিক্ষা। আর শিক্ষা অর্জন করলে মানুষ জানার জগতে প্রবেশ করে, অজানাকে আত্মস্থ করে জ্ঞানের আলোয় প্রস্ফুটিত হয়ে জ্ঞান বিলাতে থাকে। যিনি ভালো শিক্ষক তিনি ভালো অভিনেতা:- শিক্ষাকে যারা পূর্ণতা দেন, ছড়িয়ে দেন, মানুষ গড়েন, শিক্ষকতার মহান পেশায় যারা জড়িত থাকেন তাদের কেবল আমাদের এ সমাজ, রাষ্ট্র-শিক্ষক হিসাবে পরিচিতি দেন বা শিক্ষক বলে সম্বোধন করেন, সম্মান করেন। যিনি শিক্ষক তাকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকগণ মাথার তাজ মনে করেন, কারণ শিক্ষক হচ্ছে জাতি গঠন করার কারিগর বা আলোকবর্তিকা। তাই যিনি শিক্ষকতার মত মহৎ পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এতে কারো সন্দেহ, সংশয় থাকার কথা নয়। আমরা জানি একজন ভালো শিক্ষক তাঁর মেধা দিয়ে সহজ-সরল ভাষায় সুন্দর বাচন ভঙ্গির মাধ্যমে উপস্থাপন করে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কঠিন একটি বিষয় তার মতো করে বুঝিয়ে দিতে পারেন তিনি অবশ্যই একজন ভালো শিক্ষক। সুন্দর অঙ্গ-ভঙ্গি প্রদর্শনের মাধ্যমে অল্প সময়ে বুঝানো সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন। r শিক্ষক শব্দটির ইংরেজি রূপ :- r শিক্ষকতার পেশায় যারা সম্পৃক্ত হবেন তাদের বেশ কিছু গুণাবলীর কথা টিচার শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে যেমন- আবার আরবী ভাষায় শিক্ষকদেরকে বলা হয় “মুয়াল্লিম” যার প্রতিটি শব্দেও রয়েছে চমৎকার কিছূ অর্থবহ গুণাবলী- তাহলে বুঝা গেল যিনি এ পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন, তাকে উপরোক্ত গুণাবলী আগেই অর্জন করে নিতে হবে। একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী :- টিচার শব্দের বিশ্লেষণে যে গুনাগুণ আমরা দেখলাম ও জানলাম এর বাহিরে জ্ঞানগুলোও লব্ধ করতে হবে একজন শিক্ষককে। যেমন-১. প্রশিক্ষণ, ২. হোম ষ্টাডি, ৩. মনস্তাত্ত্বিক, ৪. নৈতিকতা, ৫. সময়নিষ্ঠা, ৬. দর্শন, ৭. পরিবেশ, ৮. ভূগোল, ৯. বিশ্ব-প্ররিক্রমা, সর্বোপরি গবেষণায় নিজেকে শামিল রাখা। দক্ষ শিক্ষক হতে হলে তাকে অবশ্যই বি. এড. সমমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তুলতে হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে নিজের ও ছাত্রদের জন্য অনেক জ্ঞান অর্জন হয়। যেমন শিক্ষক কিভাবে পাঠদান করবেন, কিভাবে উপস্থাপন করবেন, তার বাচন ভঙ্গি কি রূপ হবে, কিভাবে পাদটিকা তৈরী করবেন, একটা শ্রেণী কক্ষে কতক্ষণ সময় দিবেন, কম মেধা সম্পন্ন ছাত্রদের জন্য বোঝার ধরণ কি হবে, শ্রেণী কক্ষেই কিভাবে ঐ দিনের পড়া সম্পূর্ন হবে ইত্যাদি বিষয়ে শিখে নিজেকে তৈরী করে নেওয়ার সুযোগ তৈরী হয়। এরপর “হোম স্ট্যাডি” বা বাসায় অধ্যয়ন। স্কুলে বা মাদ্রাসায় যাওয়ার পূর্বে একজন শিক্ষকের উচিত বাসায় ব্যাপক অধ্যায়ন করা । তিনি শ্রেণী কক্ষে যা শিক্ষা দিবেন সে বিষয়ে নিজে বুঝে-শুনে চিন্তা করে লেকচার শীট তৈরী করে শ্রেণী কক্ষে যাবেন। তাহলে ছাত্র- শিক্ষক উভয়ের জন্য কল্যাণকর হবে। r প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পূর্বে নিজের স্মার্টনেস ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে তীক্ষè জ্ঞান রাখা জরুরী। কেননা- পোশাক ও দুশ্চিন্তা অনেক সময় একজন শিক্ষককে উদাসীন করে ফেলে যা শ্রেণী কক্ষে কোন ভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষকতার পেশায় নৈতিকতা খুবই জরুরী। নীতি-নৈতিকতা বোধ জাগ্রত না হলে কারো পক্ষে এ মহান পেশায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার পাশা পাশি সকল ছাত্র/ছাত্রীদেরকে নিজের সন্তান মনে করে সবার সাথে সমান আচরণ করতে হবে। নিজেকে সত্য ও সঠিক পথে চলার যোগ্য করে তোলার পাশাপাশি নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে এবং ছাত্র/ছাত্রীদেরকেও বলতে হবে। প্রথম শ্রেণীর একজন নাগরিক হিসাবে সব সময় সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে “সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা” সুতরাং সময়ের কাজ সঠিক সময়েই করতে হবে, অসময়ে নয়। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় পর্যায় যিনি/যারা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জীবনী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা সময়েকে সবচেয়ে বেশী অপচয় করেছেন। সুতরাং একজন শিক্ষককে নিয়ম, নীতি, সময়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা একান্ত প্রয়োজন। জাতি গঠন করার কারিগর হিসাবে শিক্ষকের দর্শন শাস্ত্রে পারদর্শীতা থাকা দরকার। দর্শন হলো সকল বিষয়ের মূল নির্যাস, নিজের মত করে আত্মস্থ করা। দর্শন শাস্ত্র ছাড়া লেখা-পড়া, গবেষণা করা বা কিছু উদ্ভাবন করা মোটেও সম্ভব নয়। একজন শিক্ষকের যেমন সময়ের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তেমনি পরিবেশগত জ্ঞানও প্রয়োজন। পরিবেশ পরিস্থিতি স্থান-কাল পাত্র ভেদে কথা বলতে হবে যাতে ভারসাম্য রক্ষা হয়। অন্যদিকে বিশ্বকে চেনা ও জানার জন্য ভৌগলিক জ্ঞান থাকা দরকার। উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে কি অবস্থান করছে তা জানা যেমন জরুরী তেমনি আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি, সৌরজগৎ, দ্রাঘিমাংশ, জোয়ার ভাটা ও চান্দ্র মাস সর্ম্পকেও জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। সর্বপরি একজন দক্ষ শিক্ষক নিয়মিত স্টাডির পাশাপাশি নিজেকে সবসময় গবেষণায় নিয়োজিত রাখা উচিত বলে মনে করেন প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞজনেরা। পরিশেষে বলবো শিক্ষকতার মহান পেশার প্রতি সম্মান প্রর্দশন করে একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী অর্জনের মধ্য দিয়ে নিজেকে সবার সামনে যোগ্য করে গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটুক এটাই হোক সবার কাম্য।